গাড়ির এসি কাজ না করলে অনেকেই হতাশ হয়ে যান। তবে চিন্তার কিছু নেই—সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে সমস্যাটি সমাধান করা সম্ভব। আধুনিক গাড়িগুলোর এসি সিস্টেম অনেকটা জটিল হলেও দক্ষ টেকনিশিয়ান দ্বারা সহজেই নির্ণয় ও মেরামত সম্ভব। এসি শুধু আরাম দেয় না—বৃষ্টির দিনে কাঁচ পরিষ্কার রাখতেও সহায়তা করে, তাই এর গুরুত্ব অবহেলা করা উচিত নয়।
গাড়ির এসি কাজ না করলে করণীয়
বাংলাদেশের মতো গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় গাড়ির এয়ার কন্ডিশনার (এসি) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। লম্বা জার্নি হোক বা শহরের ভেতরে জ্যামে আটকে থাকা, এসি ছাড়া গাড়ি চালানো অনেকটাই অস্বস্তিকর হয়ে পড়ে। কিন্তু যদি হঠাৎ করেই আপনার গাড়ির এসি কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন কী করবেন? নিচে ধাপে ধাপে সমস্যার সম্ভাব্য কারণ এবং করণীয় তুলে ধরা হলো।
১. এসি ঠিকমতো ঠাণ্ডা করছে না?
প্রথমে লক্ষ্য করুন—এসি কি একেবারেই কাজ করছে না, নাকি ঠাণ্ডা ঠিকমতো হচ্ছে না। যদি গাড়ির এসি কিছুটা বাতাস দিচ্ছে কিন্তু ঠাণ্ডা নয়, তাহলে এটি সাধারণত গ্যাস লিক, কমপ্রেসর সমস্যা বা কনডেনসারে ময়লা জমার ইঙ্গিত দেয়।
করণীয়:
গাড়ি এক্সপার্ট বা এসি টেকনিশিয়ান দিয়ে AC gas pressure চেক করান।
কনডেনসারে ধুলা বা পাতা জমলে সেটি পরিষ্কার করাতে হবে।
লিক পরীক্ষা করে প্রয়োজনে গ্যাস রিচার্জ করতে হতে পারে।
২. এসি সম্পূর্ণ বন্ধ?
যদি এসি একেবারে কাজ না করে (অর্থাৎ ফ্যানও চলে না), তাহলে এটি হতে পারে ইলেকট্রিক্যাল কোনো সমস্যা। যেমন: ফিউজ পুড়ে যাওয়া, সুইচ বা কন্ট্রোল প্যানেলের ত্রুটি ইত্যাদি।
করণীয়:
ফিউজ বক্স চেক করুন। প্রয়োজনে নতুন ফিউজ লাগান।
এসি কন্ট্রোল বোর্ড বা সুইচ চেক করুন। এটি কাজ না করলে ইলেকট্রিশিয়ান বা সার্ভিসিং সেন্টারে নিন।
৩. অস্বাভাবিক শব্দ হচ্ছে?
গাড়ির এসি চালু করলেই যদি বিকট শব্দ হয় বা কম্পন অনুভব করেন, তাহলে বুঝতে হবে যান্ত্রিক কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমপ্রেসরের ক্লাচ নষ্ট হলে এমনটি হতে পারে।
করণীয়:
এসি চালু রেখে হুড খুলে কমপ্রেসর পর্যবেক্ষণ করুন।
যদি সমস্যা থাকে, তবে কমপ্রেসর পরিবর্তন বা মেরামতের প্রয়োজন হতে পারে
৪. এসির সুইচ অন করলে ইঞ্জিন ভারী লাগে?
অনেক সময় দেখা যায় এসি অন করার সাথে সাথেই গাড়ির ইঞ্জিন কাঁপতে শুরু করে বা গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। এর মানে এসি কম্প্রেসর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।
করণীয়:
কম্প্রেসর ক্লাচ ও বেল্ট চেক করান।
আইডলিং স্পিড ঠিক আছে কি না সার্ভিসিং সেন্টারে যাচাই করান।
৫. বাতাস আসছে কিন্তু ঠাণ্ডা না?
অনেক সময় এসি চালু করলে বাতাস ঠিকমতো আসে, কিন্তু সেটি ঠাণ্ডা না হয়ে গরম বা স্বাভাবিক থাকে। এটি সাধারনত AC refrigerant শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে হয়।
করণীয়:
সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে গিয়ে রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস রিচার্জ করান।
লিক আছে কি না সেটা নিশ্চিত হতে UV leak detection পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. এয়ার ফিল্টার ব্লক?
গাড়ির এসি ফিল্টার যদি ধুলাবালিতে বন্ধ হয়ে যায়, তবে বাতাসের প্রবাহ কমে যায় এবং এসির কার্যকারিতা নষ্ট হয়।
করণীয়:
কেবিন এয়ার ফিল্টার খুলে পরিষ্কার করুন বা নতুন ফিল্টার লাগান।
প্রতি ৬ মাস পরপর এটি পরীক্ষা করা উচিত।
৭. এসি রিলে বা সেন্সরের সমস্যা?
অনেক সময় গাড়ির এসি রিলে বা তাপমাত্রা সেন্সরের ত্রুটির কারণে এসি চালু হয় না।
করণীয়:
মেকানিক দিয়ে রিলে ও সেন্সর চেক করান।
প্রয়োজনে নতুন রিলে বা সেন্সর স্থাপন করুন।
৮. নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি
গাড়ির এসি যেন দীর্ঘদিন ভালোভাবে কাজ করে, তার জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। প্রতি ৬ মাস বা বছরে অন্তত একবার এসি সিস্টেম সার্ভিস করানো উচিত।
করণীয়:
গ্যাস লেভেল, লিক, ফ্যান স্পিড, কনডেনসার ফ্যান, এবং ফিল্টার অবস্থা যাচাই করাতে হবে।
অভিজ্ঞ সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়মিত গাড়ি পরীক্ষা করান।