এই লেখায় গাড়ির ইঞ্জিন টেম্পারেচার হঠাৎ বেড়ে গেলে কী করণীয়, তার কারণ ও প্রতিকার বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সঠিক পদক্ষেপ ইঞ্জিনকে বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
গাড়ির ইঞ্জিন হলো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ, যা সঠিকভাবে কাজ করতে হলে নির্দিষ্ট তাপমাত্রার মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, গাড়ি চালানোর সময় ইঞ্জিনের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এটি গাড়ির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে, এমনকি ইঞ্জিন পুরোপুরি বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই ইঞ্জিনের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে তাৎক্ষণিক ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইঞ্জিন ওভারহিট হওয়ার সম্ভাব্য কারণ:
ইঞ্জিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। যেমন:
কুল্যান্ট লেভেল কমে যাওয়া: ইঞ্জিন ঠান্ডা রাখার জন্য ব্যবহৃত কুল্যান্ট পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে ইঞ্জিন দ্রুত গরম হয়ে যায়।
রেডিয়েটর লিক বা ব্লক হওয়া: রেডিয়েটর যদি ঠিকমতো কাজ না করে তবে কুলিং সিস্টেম ব্যর্থ হয়।
ওয়াটার পাম্প বিকল হওয়া: এটি কুল্যান্ট সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করে, ফলে ইঞ্জিন দ্রুত ওভারহিট হয়।
কুলিং ফ্যান কাজ না করা: ফ্যান সঠিকভাবে ঘুরছে না বা ফ্যান বেল্ট ছিঁড়ে গেলে ইঞ্জিন ঠাণ্ডা হতে পারে না।
থার্মোস্ট্যাট বন্ধ থাকা: এটি ইঞ্জিনের কুল্যান্ট প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি সঠিকভাবে কাজ না করলে ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হতে পারে।
তেল কম থাকা বা তেলের মান খারাপ হওয়া: ইঞ্জিন অয়েল যথাযথ না হলে ঘর্ষণ বেড়ে যায় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
ইঞ্জিন ওভারহিট হলে করণীয়:
১. গাড়ি থামান ও ইঞ্জিন বন্ধ করুন
যদি ইঞ্জিনের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে থাকে তবে যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি একটি নিরাপদ স্থানে থামান। ইঞ্জিন বন্ধ করুন এবং গাড়ির হুড খুলে দিন যেন গরম বাষ্প বাইরে বের হতে পারে। সরাসরি রেডিয়েটরের ঢাকনা খুলবেন না, কারণ এতে প্রচণ্ড গরম পানি বা বাষ্প নির্গত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
২. ইঞ্জিন ঠাণ্ডা হতে দিন
ইঞ্জিন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এটি হতে ১৫-৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তখন গাড়ির নিচে কোনো তরল পড়ছে কি না লক্ষ্য করুন – এটি কুল্যান্ট লিকের ইঙ্গিত হতে পারে।
৩. কুল্যান্ট বা পানি পরীক্ষা করুন
ইঞ্জিন ঠাণ্ডা হলে রেডিয়েটরের কুল্যান্ট লেভেল পরীক্ষা করুন। যদি তা কম থাকে তবে উপযুক্ত কুল্যান্ট বা ডিস্টিল্ড পানি যোগ করুন। বাজারে বিভিন্ন মানসম্পন্ন কুল্যান্ট পাওয়া যায়, যা ইঞ্জিনকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।
৪. লিক চিহ্নিত করুন
রেডিয়েটর, হোস পাইপ, ওয়াটার পাম্প বা রিজার্ভার থেকে কোনো ধরনের ফাটল বা তরল নিঃসরণ হচ্ছে কি না তা খেয়াল করুন। যদি লিক থাকে তবে তা দ্রুত সারানো প্রয়োজন।
৫. কুলিং ফ্যান পরীক্ষা করুন
অনেক সময় ফ্যান কাজ না করলে ইঞ্জিন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ফ্যানটি স্বাভাবিকভাবে ঘুরছে কি না তা নিশ্চিত করুন। ফ্যান বেল্ট ছিঁড়ে গেছে কিনা তাও লক্ষ্য করুন।
৬. হিটার চালু করে তাপ নির্গত করা
একটি অস্থায়ী পদ্ধতি হিসেবে আপনি গাড়ির হিটার চালু করতে পারেন, এতে ইঞ্জিনের কিছু তাপ গাড়ির কেবিনে চলে আসে এবং ইঞ্জিন কিছুটা ঠাণ্ডা হয়। যদিও গরমের দিনে এটি অস্বস্তিকর, তবে এটি কার্যকর একটি পদ্ধতি।
৭. গাড়ি না চালিয়ে মেকানিকের সাহায্য নিন
যদি সমস্যার সঠিক কারণ নির্ণয় করতে না পারেন, অথবা বারবার একই সমস্যা হয়, তবে গাড়ি চালানো বন্ধ রেখে টো করে সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যান। অবহেলা করলে ইঞ্জিন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
ইঞ্জিন ওভারহিট হওয়া ঠেকাতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়:
প্রতি মাসে কুল্যান্ট এবং রেডিয়েটর চেক করুন।
নির্দিষ্ট সময় পরপর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করুন।
রেডিয়েটর ও ফ্যান পরিষ্কার রাখুন।
দীর্ঘ ভ্রমণের আগে গাড়ির কুলিং সিস্টেম পরীক্ষা করুন।
কুলিং ফ্যান এবং থার্মোস্ট্যাট ঠিক আছে কি না করুন।