গাড়ির ব্রেক ফেল হওয়ার আগে ৮টি সংকেত যা আপনাকে সতর্ক করবে
গাড়ি চালানোর সময় সবচেয়ে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্রেকের কার্যক্ষমতা। একটি ভালো ব্রেক সিস্টেম চালকের জীবন ও যাত্রীর নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। তবে অনেক সময় গাড়ির ব্রেকের সঙ্গে সম্পর্কিত ছোট ছোট সমস্যাগুলো উপেক্ষিত হয়, যা বড় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। গাড়ির ব্রেক ফেল হওয়ার আগেই কিছু স্পষ্ট সংকেত থাকে যেগুলো যদি সঠিকভাবে বুঝতে পারেন, তবে সময়মতো পদক্ষেপ নিয়ে দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। এই লেখায় গাড়ির ব্রেক ফেল হওয়ার আগে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত আলোচনা করা হলো, যা লক্ষ্য করলে আপনি সচেতন থাকতে পারবেন।
১. ব্রেক প্যাড থেকে অস্বাভাবিক শব্দ শোনা
গাড়ি চালানোর সময় যদি ব্রেক প্যাড থেকে স্ক্র্যাচিং, সিসিং বা স্ক্রিনিং ধরনের শব্দ শোনা যায়, তাহলে বুঝতে হবে ব্রেক প্যাড অতিরিক্ত পরিমাণে ক্ষয় হয়েছে। ব্রেক প্যাডের মূল কাজ হলো গাড়ির চাকা থামানো, কিন্তু যখন প্যাড খুব বেশি ঘষে পাতলা হয়ে যায়, তখন ব্রেক ডিস্কের সঙ্গে সরাসরি ধাতুর ঘর্ষণ শুরু হয় এবং সেই সময় গাড়ি থেকে অস্বাভাবিক শব্দ বের হয়। এই সংকেত পেলে দ্রুত গাড়ি মেকানিকের কাছে নিয়ে যান এবং ব্রেক প্যাড পরিবর্তনের ব্যবস্থা করুন।
২. ব্রেক প্যাড পাতলা হয়ে যাওয়া
ব্রেক প্যাডের পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে ব্যবহারের সঙ্গে। সাধারণত প্রতিটি ব্রেক প্যাডের একটি নির্দিষ্ট ঘনত্ব থাকে, যা নিচে নামলে ব্রেক কার্যক্ষমতা কমে যায়। যদি নিয়মিত চেক না করেন, তাহলে ব্রেক প্যাড অতিরিক্ত ক্ষয় হয়ে ব্রেক ডিস্ক বা রটারেও ক্ষতি করতে পারে। এটি গাড়ির ব্রেকিং ক্ষমতাকে হ্রাস করে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সময়ে সময়ে ব্রেক প্যাডের অবস্থা পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩. ব্রেক ওয়ার্নিং লাইট জ্বলে ওঠা
অনেক আধুনিক গাড়িতে ব্রেক সিস্টেমের জন্য আলাদা একটি ওয়ার্নিং লাইট থাকে যা কনসোল প্যানেলে জ্বলে ওঠে যখন ব্রেক ফ্লুইডের মাত্রা কমে যায়, ব্রেক প্যাড ক্ষয় হয় অথবা অন্য কোনো যান্ত্রিক সমস্যা থাকে। এই লাইটটি দেখতে পেলেই দেরি না করে গাড়ি মেকানিকের কাছে নিয়ে যেয়ে চেক করানো উচিত। ওয়ার্নিং লাইট উপেক্ষা করলে ব্রেক ফেল হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪. ব্রেক প্যাডেল চাপ দিলে স্পঞ্জি বা নরম অনুভূতি
যখন ব্রেক প্যাডেল চাপ দিলে তা সাধারণের তুলনায় নরম বা স্পঞ্জির মতো অনুভূত হয়, তখন বুঝতে হবে ব্রেক সিস্টেমে ফ্লুইড লিক বা এয়ার ঢুকেছে। এয়ার ঢুকে গেলে ব্রেক লাইনগুলোতে চাপ সঠিকভাবে পৌঁছায় না, ফলে ব্রেকিং ক্ষমতা কমে যায়। এ ছাড়া ব্রেক ফ্লুইডের মাত্রা কমে গেলে একই ধরনের সমস্যা হয়। স্পঞ্জি ব্রেক প্যাডেল অনুভব হলে দ্রুত যান্ত্রিক পরীক্ষা করানো জরুরি।
৫. গাড়ি ব্রেক করার সময় টান পড়া বা ড্রিফট হওয়া
ব্রেক চাপানোর সময় গাড়ি যদি সোজা না থাকে এবং একপাশে টেনে নিয়ে যায়, অর্থাৎ ড্রিফট করে, তাহলে বুঝতে হবে ব্রেকের একপাশের সিস্টেমে সমস্যা হয়েছে। সাধারণত ব্রেক ক্যালিপার, ব্রেক লাইনের লিকেজ বা ব্রেক প্যাডের অসমান ক্ষয় হলে এমন সমস্যা দেখা দেয়। এটি গাড়ি চালানোর সময় নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণ হতে পারে। তাই গাড়ি ব্রেক করার সময় সোজা থাকছে কিনা লক্ষ করা জরুরি।
৬. ব্রেক ফ্লুইডের লেভেল কমে যাওয়া
ব্রেক ফ্লুইড হলো ব্রেক সিস্টেমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যার মাধ্যমে চাপ প্রেরণ করে ব্রেকিং কার্যকর হয়। যদি ব্রেক ফ্লুইডের লেভেল কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সিস্টেমে লিকেজ হয়েছে অথবা ব্রেক প্যাড ক্ষয়ে ফ্লুইডের মাত্রা কমছে। ফ্লুইড লিকেজ হলে ব্রেকের ক্ষমতা খুব দ্রুত হ্রাস পায়। নিয়মিত ব্রেক ফ্লুইডের লেভেল চেক করে রাখুন এবং সময়মতো তা পরিবর্তন করুন।
৭. ব্রেক এলাকা গরম অনুভব হওয়া
গাড়ি চালানোর সময় বা ব্রেক ব্যবহারের পর যদি গাড়ির চাকা বা ব্রেক এলাকা অস্বাভাবিকভাবে গরম হয়, তবে বুঝতে হবে ব্রেক সিস্টেমে সমস্যা রয়েছে। ব্রেক ক্যালিপার বা ডিস্ক আটকে যেতে পারে, যার ফলে অতিরিক্ত ঘর্ষণ ও গরম হয়। গরম ব্রেক সিস্টেম ব্রেক ফেলে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ায় এবং গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণ হতে পারে। গরম অনুভূত হলে অবশ্যই গাড়ি থামিয়ে পরীক্ষা করুন।
৮. গাড়ি ব্রেক করার সময় থামতে বেশি দূরত্ব লাগা
ব্রেক ফেলের সবচেয়ে সরাসরি লক্ষণ হলো গাড়ি থামাতে প্রচলিতের চেয়ে বেশি দূরত্ব নেয়া। অর্থাৎ, আপনি যতই ব্রেক চাপুন না কেন, গাড়ি সঠিক সময়ে থামছে না বা থামতে দেরি হচ্ছে। এটি ব্রেকের কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ার বা ব্রেক ফ্লুইড কমে যাওয়ার কারণে হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে গাড়ি চালানো অত্যন্ত বিপজ্জনক। দ্রুত ব্রেক সিস্টেম পরীক্ষা করানো জরুরি।