জনসাধারণের চলাচলের রাস্তায় মোটরযান পরিচালনার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স অপরিহার্য। যদি কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া যেকোনো গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালায় তাহলে তাকে জরিমানা ও শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকর হওয়ার পর থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জরিমানা নিয়ে সকলের মাঝে অনেক রকম প্রশ্ন তৈরি হয়েছে । তাই, আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া যেকোনো গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালানো বাংলাদেশের আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন পাশ হওয়ার পর, এটি ২০২১ সালে কার্যকর হয়। এই আইনের বিভিন্ন ধারায় ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন চালকদের শাস্তি সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জরিমানা ও শাস্তি
আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে বা ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করলে এবং লাইসেন্স হস্তান্তরসহ লাইসেন্স সংক্রান্ত বিভিন্ন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইনটিতে।
ধারা- ৬৬
অপরাধের ধরণ: ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরযান ও গণপরিবহন চালনা বিধি নিষেধ সংক্রান্ত ধারা ৪ এবং ৫ এর বিধান লঙ্ঘন করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। জরিমানা: অনধিক ২৫ হাজার টাকা; দন্ড: অনধিক ৬ মাস।
ধারা- ৬৭
অপরাধের ধরণ: ড্রাইভিং লাইসেন্স হস্তান্তর সংক্রান্ত ধারা ৬ এর বিধান লঙ্ঘন করলেও শাস্তি হবে। এক্ষেত্রে জরিমানা: অনধিক ০৫ হাজার টাকা; দন্ড: অনধিক ০১ মাস।
ধারা- ৬৮
অপরাধের ধরণ: বিদেশী নাগরিক দিয়ে এই আইন, বিধি বা প্রবিধানের কোন বিধান বা লাইসেন্স প্রদত্ত শর্ত অমান্য সংক্রান্ত ধারা ৯ এর বিধান লঙ্ঘন করলে আপনার শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। জরিমানা: অনধিক ৩০ হাজার টাকা।
ধারা- ৬৯
অপরাধের ধরণ: কর্তৃপক্ষ ব্যতিত ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত , প্রদান বা নবায়নে বিধি নিষেধ সংক্রান্ত ধারা ১০ এর বিধান লঙ্ঘন করলে আপনার শাস্তি হবে। জরিমানা: অনূন্য ০১ লক্ষ টাকা অনধিক ০৫ লক্ষ টাকা; দন্ড: অনূন্য ০৬ মাস অনধিক ০২ বছর।
ধারা- ৭০
অপরাধের ধরণ: ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত, প্রত্যাহার বাতিল করা হইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক মোটরযান চালানোর উপর বিধি নিষেধ সংক্রান্ত ১২ এর বিধান লঙ্ঘন করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। জরিমানা: অনধিক ২৫ হাজার টাকা; দন্ড: অনধিক ০৩ মাস।
ধারা- ৭১
অপরাধের ধরণ: ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত, প্রত্যাহার বাতিল করা হইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক মোটরযান চালানোর উপর বিধি নিষেধ সংক্রান্ত ১২ এর বিধান লঙ্ঘন করলে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। জরিমানা: অনধিক ০৫ হাজার টাকা; দন্ড: অনধিক ০১ মাস।
ধারা- ৯৬
অপরাধের ধরণ: মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠা বা পরিচালনা সংক্রান্ত ধারা ৬৩ এর বিধান লঙ্ঘন করলে সে স্কুল বা পরিচালনা শাস্তি পাবেন। জরিমানা: অনধিক ১ লক্ষ টাকা; দন্ড: কর্তৃপক্ষ ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল বন্ধ করতে পারবে।
FAQ – সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে কী শাস্তি ও জরিমানা হবে?
উত্তর: বৈধ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে BDT ২৫,০০০ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে এবং সর্বোচ্চ ৬ মাসের জেল হতে পারে।
প্রশ্ন: নিজের লাইসেন্স অন্যকে ব্যবহার করতে দিলে কী শাস্তি আছে?
উত্তর: নিজের লাইসেন্স অন্যকে ব্যবহার করতে দিলে BDT ৫,০০০ পর্যন্ত জরিমানা এবং সর্বোচ্চ ১ মাসের সাজা হতে পারে।
প্রশ্ন: বিদেশি নাগরিক যদি বৈধ লাইসেন্স ছাড়া বাংলাদেশে গাড়ি চালায়, কী শাস্তি হতে পারে?
উত্তর: বিদেশি নাগরিক বৈধ লাইসেন্স ছাড়া চালালে BDT ৩০,০০০ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
প্রশ্ন: অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি বা ব্যবহার করলে কী শাস্তি হবে?
উত্তর: নকল বা অবৈধ লাইসেন্স প্রস্তুত বা ব্যবহার করলে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং ৬ মাস থেকে ২ বছরের জেল হতে পারে।
প্রশ্ন: ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন না করার শাস্তি কি?
উত্তর: নবায়ন না করা অবস্থায় চালালে ধারা-৬৬ অনুযায়ী জরিমানা ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে এবং গাড়ি জব্দ হতে পারে।
প্রশ্ন: মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে লাইসেন্স ছাড়া জরিমানা কত?
উত্তর: ধারা-৬৬ অনুযায়ী, BDT ২৫,০০০ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে এবং ধারা-৬৭ অনুযায়ী অন্যের লাইসেন্স ব্যবহার করলে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
প্রশ্ন: ভুয়া বা নকল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করলে কী শাস্তি?
উত্তর: নকল লাইসেন্স ব্যবহার করলে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং ৬ মাস থেকে ২ বছরের জেল হতে পারে।
প্রশ্ন: ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে কি শুধু জরিমানা, নাকি জেলও হতে পারে?
উত্তর: জরিমানার পাশাপাশি ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে (ধারা-৬৬ অনুযায়ী)।
